কজন ব্যক্তির নামে মোবাইল সিমের সর্বোচ্চ সংখ্যা ১৫ থেকে ১০টিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন— বিটিআরসি।
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে ১০টির অতিরিক্ত সিম আছে— এমন ২৬ লাখ গ্রাহকের ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত ১৯ মে দেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ২৯৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়, যা সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।
তবে সভার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের মোট সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার। আর বিক্রি হওয়া সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬২ লাখ। এসব গ্রাহকের মধ্যে পাঁচটি বা তার কম সিম রয়েছে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ গ্রাহকের।
পাঁচ থেকে ১০টি পর্যন্ত সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ গ্রাহকের। ১১ থেকে ১৫টি পর্যন্ত সিম রয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ গ্রাহকের।
অপারেটরগুলোর ১৫টি সিমধারী গ্রাহকের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য পর্যালোচনা করে কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, “দেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ সিম বিক্রি হয়। গ্রাহকের সিম নিবন্ধনের তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, একজন গ্রাহক একদিনে দুই বা ততোধিক সিম নিবন্ধন করছেন, যা অস্বাভাবিক। কিছু অসাধু রিটেইলার (খুচরা ব্যবসায়ী) গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ) সংরক্ষণ করে অতিরিক্ত সিম নিবন্ধন করে থাকেন, যা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ, প্রতারণামূলক কার্যক্রম কমানো, গ্রাহক নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে একক গ্রাহকের সিম সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সেখানে তুলে ধরা হয়।
আশপাশের দেশগুলোতে একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ কতটি সিম রাখতে পারে তা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।
কার্যবিবরণীতে বলা হয়, কাছাকাছি আর্থিক সক্ষমতার দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৫টি, ভারতে নয়টি (ছয়টি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে), পাকিস্তানে পাঁচটি, মালদ্বীপে ১০টি, মিয়ানমারে দুটি, নাইজেরিয়ায় প্রতি অপারেটরের চারটি করে সিম রাখতে পারেন প্রতিজন গ্রাহক। শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে সিম রাখার কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
আর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ায় ২০টি, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে পাঁচটি, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তিনটি করে সিম রাখতে পারেন একজন গ্রাহক। যুক্তরাজ্য, চীন ও জাপানে সিম সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের পাঁচজন করে গ্রাহক যাদের ১৫টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের তিন মাসের সিম ব্যবহারের তথ্য পর্যালোচনা করেছে বিটিআরসি।
এই ১৫ জন গ্রাহকের মধ্যে গ্রামীণফোনের মাত্র একজন গ্রাহকের ১০টি সিম কার্যকর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, “যেসব গ্রাহক একই অপারেটরের ১৫টি সিম কিনেছেন, তারা কেউই গড়ে পাঁচ-ছয়টির বেশি সিম একই সময়ে সচল রাখেন না। আর ১৫টি সিম রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকায় অপারেটররা সিম বিক্রির অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যেসব সিম প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে লাগে না।”
গ্রাহকের একাধিক সিম রাখার সুযোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে কার্যবিবরণীতে বলা হয়, “অনেক প্রবীণ ব্যক্তির আঙুলের ছাপ স্পষ্টভাবে না পাওয়ায় তারা পরিবারের অন্য কারো নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করেন। দেশের প্রত্যন্ত বা দূরবর্তী এলাকায় মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা নিবন্ধন কেন্দ্র না থাকায় অনেক নারী বা প্রবীণ ব্যক্তির পক্ষে নিজের নামে সিম নিবন্ধন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
“১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাদের সিমগুলো সাধারণত তাদের বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে নিবন্ধিত হয়। আবার অনেকেই বাসায় স্মার্ট যন্ত্রপাতি, মোডেম, আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করেন। যেগুলোয় ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।”